পাঁচ কারণে বিশ্বকাপ জিতবে আর্জেন্টিনা। আগামী ২১ নভেম্বর থেকে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা শুরু হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি দল হলো আর্জেন্টিনা।প্রায় সবারই ফেবারিট দল আর্জেন্টিনা।
এবারে সবার ধারণা বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা নিয়ে যাবে।
কখনো বিশ্বকাপ না জেতা মেসি কী ভাগ্যের গেরো খুলতে পারবেন? গত বছর কোপা আমেরিকা জিতে ২৮ বছরের শিরোপাখরা ঘোচানো আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা আশাবাদী, এবার বিশ্বকাপ-খরাটাও ঘুচবে। এমন কোন কোন কারণ সমর্থকদের এমন আশাবাদী করে তুলছে? দেখে নেওয়া যাক!
তবে এবার ৫ কারণে আর্জেন্টিনা কাপ মারবে। এই পাঁচ কারণ গুলো হলো:
১। নির্ভার লিওনেল মেসিঃ ২০২২ সালে এসে দলে লিওনেল মেসি থাকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা বাতুলতা। ফর্মে থাকলে দলের জন্য মেসি যে কত বড় সম্পদ, এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। গত দেড় দশকে ক্লাবের হয়ে মেসি যা করেছেন, জাতীয় দলের হয়ে ঠিক সেভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন কি না—বছরখানেক আগেও সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটাই ছিল। গত বছর কোপা আমেরিকা জিতে সংশয়বাদীদের সে প্রশ্নও থামিয়ে দিয়েছেন। বাকি এখন শুধুই বিশ্বকাপ।
২। দলীয় ভ্রাতৃত্ববোধঃ আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচ খেলার জন্য খেলোয়াড়েরা যখন অনুশীলন ক্যাম্প করতে যান, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তাঁদের কার্যক্রমের দিকে পারলে একটু চোখ রাখুন। রদ্রিগো দি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, পাওলো দিবালা, আনহেল দি মারিয়া, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, এমিলিয়ানো মার্তিনেজদের পোস্ট করা দলগত ছবিগুলো দলীয় ভ্রাতৃত্ববোধের জয়গানই গায় যেন। প্রমাণ করে দলের খেলোয়াড়েরা অন্তত একে অন্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন নন, পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় তাঁদের। আর খেলোয়াড়দের মধ্যকার সুদৃঢ় সম্পর্ক যেকোনো দলীয় সাফল্যের চাবিকাঠি, তা কে না জানে!
৩। রক্ষণভাগঃ ডিয়েগো ম্যারাডোনার অধীন ২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ডুবিয়েছিল জোড়াতালির রক্ষণ। ফুলব্যাক হিসেবে নির্দিষ্ট কেউ খেলতেন না। কিংবদন্তি রাইটব্যাক হাভিয়ের জানেত্তিকে নেওয়া হয়নি, লেফট উইঙ্গার হোনাস গুতিয়েরেজকে খেলানো হয়েছে রাইটব্যাক হিসেবে, আবার কখনো নিকোলাস বুরদিসো, নিকোলাস ওতামেন্দি বা ক্লেমেন্ত রদ্রিগেজের মতো সেন্টারব্যাক খেলেছেন ফুলব্যাক হিসেবে। ২০১৪ সালে তেমন জোড়াতালির রক্ষণ না হলেও একাদশের ছক নিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন আলেহান্দ্রো সাবেয়া।
৪। লিওনেল স্কালোনিঃ আনকোরা কোচ লিওনেল স্কালোনির ওপর আস্থা রাখার ফল পাওয়া শুরু করেছে আর্জেন্টিনা। প্রথম থেকে একাধিক খেলোয়াড় অদল-বদল করে নিজের পছন্দমতো স্কোয়াড গঠন করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এই দলের প্রত্যেকের শক্তি-দুর্বলতা হাতের তালুর মতো চেনা তাঁর। ৪-৩-৩ ছকের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন এই কোচ, খুব বেশি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছেন না, খেলছেন ফলাফলনির্ভর ফুটবল, যা দিন শেষে ইতিবাচক ভূমিকাই রাখছে। ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার সেমিতে হারার পর টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত থাকা সেটাই বলে অন্তত। স্কালোনি মেসিদের দলগত প্রেসিং শিখিয়েছেন কার্যকর উপায়ে, যা আর্জেন্টিনার খেলা দেখলেই বোঝা যায়।
৫। এমিলিয়ানো মার্তিনেজঃ গোলকিপার নিয়ে আর্জেন্টিনার হাহাকার আজকের নয়। ২০০৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে জার্মানির বিপক্ষে মূল গোলকিপার রবার্তো আবোনদানজিয়েরির চোটের পর লিও ফ্রাঙ্কো খেলতে নামেন, যে গোলকিপার পেনাল্টি শুটআউটে আর্জেন্টিনাকে কোনো সাহায্যই করতে পারেননি। এরপর এলেন সের্হিও রোমেরো। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পেনাল্টি শুটআউটটাই ব্যতিক্রম, না হয় গোটা ক্যারিয়ারে রোমেরোও তেমন নির্ভরতা দিতে পারেননি আর্জেন্টিনাকে। গত বিশ্বকাপে উইলি ক্যাবায়েরো ও ফ্রাঙ্কো আরমানির হাস্যকর একেকটা ভুল শূল হতে বিঁধেছে আর্জেন্টাইন ভক্তদের মনে। তবে তাঁদের কেউই নন, কোচ স্কালোনির মূল পছন্দের গোলকিপার এখন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। আর একজন বিশ্বমানের গোলকিপার হওয়ার জন্য যা যা গুণাবলি থাকার দরকার, সবকিছুই এই মার্তিনেজের মধ্যে আছে যে সেটা গত কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল ও ফাইনালেই প্রমাণ করেছেন তিনি।