জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকরির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা পড়াশুনার পরিবেশ। যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনার্স ২য়- ৩য় বর্ষ থেকেই চাকরির প্রস্তুতির জন্য পাবলিক লাইব্রেরিতে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করে, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা শুরু হয়না। এমন কি অনার্স পাশ করার পরে একটা পড়ার ইচ্ছে তৈরি হলেও দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। আমরা কিভাবে চাকরির প্রস্তুতি নিবো তার আগে জানা উচিৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় সমস্যা কী কী?
১। পড়াশুনার পরিবেশ সমস্যাঃ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরিতে পড়ার অভ্যাস অনেক কম। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা মেসে থাকে। ফলে তারা পড়ার জন্য যে পরিবেশ পায় তা থাকা, খাওয়া, আড্ডা, পড়াসহ সবকিছুর একমাত্র কেন্দ্র। ফলে চাইলেও বেশি সময় মনযোগ সহকারে পড়া সম্ভব হয়না। আপনি একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়লে বুঝতে পারবেন পড়ার পরিবেশ কী বা কেমন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একরুমে ৪ থেকে ২২ জন পর্যন্ত থাকে কিন্তু তারপরেও তারা এতো ভাল পড়াশুনা করতে পারে তার প্রধান কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি। এখানে পড়তে পড়তে সময় কিভাবে যায় কিছু বুঝা যায়না। সবাই পড়ছে তারপরেও চুপচাপ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়ের জন্য আশেপাশের যেকোন লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করা উচিৎ।
২। ভুল পরামর্শঃ৯৯% জাতীয় বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভুল পরামর্শ। তারা অনার্স পাশ করার পরেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই অথবা কোচিং এর শিক্ষক পরিচালকদের থেকে কিভাবে চাকরির প্রস্তুতি নিবে তার একটা পরামর্শ নিয়ে পড়াশুরু করে। তবে যারা এই পরামর্শ দেয় তারা বেশির ভাগ একটা ভুল পরামর্শ দিয়ে থাকে বিসিএস। সবাই বলে বিসিএস প্রস্তুতি নাও সব চাকরির প্রস্তুতি হয়ে যাবে।এই পরামর্শ নিয়ে যারা প্রস্তুতি শুরু করে ১ মাসের মধ্যে তার মধ্যে থেকে ১% পড়াশুনা করতে থাকে আর ৯৯% মনে করে তারে দিয়ে পড়াশুনা সম্ভব নয়। কারণ বিসিএস সিলেবাস হচ্ছে সমুদ্র আপনি পুকুরে নামতে পারেন না , আপনি গিয়েছেন সমুদ্র জয় করতে বিষয়টা এমন। আপনি ছোট থেকে বড় হয়েছেন, নাকি বড় থেকে ছোট হয়েছেন? শুরুতে কোনোভাবেই বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ নয়। চাকরির জন্য যা প্রয়োজন সেই বিষয়গুলো আগে গুরুত্ব দিয়ে শেষ করতে হবে। নিচে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
৩। পরিকল্পনার অভাবঃজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার তৈরির জন্য একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করবে মানে কোন চাকরির প্রস্তুতি নিবে তারা এইটা নির্বাচন করতে পারেনা। বড় বড় নিয়োগ দেখলেই তারা মনে করে হ্যাঁ এইটাতেই চাকরি হবে কিন্তু এইটা যে মরীচিকা তারা এইটা বুঝতেই পারে না। আসলে একটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পরিকল্পনা হওয়া উচিৎ আমি এই ধরনের চাকরি করবো মানে চাকরির গ্রেড অনুযায়ী টার্গেট করতে হবে। আপনি কম্পিউটার অপারেটর পদের চাকরি করবেন আপনি যদি বিসিএস সিলেবাস অনুযায়ী পড়েন তাহলে কি আপনার পড়া শেষ হবে?? আর এইটা অনেকটা এমন হলো না মশা মারতে কামান দাগানোর মত। এই রকম ভুল পরিকল্পনার জন্য বিসিএস প্রস্তুতিও শেষ হচ্ছে না, আবার অল্প পড়ে যে চাকরি হবে সেটাও হচ্ছে না। তাই আপনাকে টার্গেট নির্বাচন করতে হবে আপনি কি চাচ্ছেন।
৪। ভুল বই নির্বাচনঃ বই নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার কাছে যত বেশি বই হবে আপনার পড়া তত বেশি কম হবে এবং আপনি সব সময় ভাববেন কোনটা পড়বো আর কোন বই ভাল বা কোনটা থেকে কেমন কমন আসবে। কেউ যদি বলে এই বাংলা বই থেকে ১০০% কমন, এই ইংরেজি বই থেকে ১০০% কমন এসেছে আপনি কি করবেন আগে গিয়ে সেই বই ক্রয় করবেন কিন্তু এইটা একবার ও ভাববেন না আপনাকে যে বই ১০০% কমন দিয়েছে সেই বইয়ের পৃষ্ঠা কত। এখন ১৫-২০ মার্কের বাংলার জন্য আপনাকে পড়তে বলছে ৭০০-৮০০ পৃষ্ঠা আর ইংরেজির জন্য আপনাকে পড়তে বলছে ১২০০+ পৃষ্ঠা আর গণিতের জন্য পড়তে বলছে ১০০০+ পৃষ্ঠা অন্য গুলো বাদই দিলাম আপনি এই ৩ বই শেষ করতেই আপনার লাইফ শেষ। আর এত বড় বড় বই পড়ে আবার প্রস্তুতি নিবেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক নিবন্ধন, কম্পিউটার অপারেটর বা এই ধরণের পদের জন্য। পারবেন না কোন দিন বই শেষ করতে, পারবেন না কোনদিন চাকরির প্রস্তুতি নিতে।
তাহলে কিভাবে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ?
প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন তার আগে কোন চাকরির প্রস্তুতি নিবেন তা আগে নির্বাচন করুন। অনার্স পাশের আগেই নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য তৈরি করুন। আর অনার্স পাশ করেই নিজেকে বড় ভেবে বিসিএস প্রস্তুতির জন্য না গিয়ে আগে শিক্ষক নিয়োগ বা শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য পড়াশুনা করুন। যখন এই সিলেবাস শেষ হবে তখন আপনি চাইলে বিসিএস টার্গেট করতে পারেন, এতে কি হলো আপনি ছোট থেকে বড় হচ্ছেন কোন দিন ছোট হতে হবে না। যেমন আপনি চাইলেও হাজার চেষ্টা করলে ছোট হতে পারবেন না। তবে শুরুটা কিভাবে করবেন এইটা আপনার জীবনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা অধ্যায় ভিত্তিক করবেন, তবে যে অধ্যায়গুলো চাকরির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যেমন বাংলার ক্ষেত্রে যেমনঃ কারক, সন্ধি, সমাস, ধ্বনি-বর্ণ, সমার্থক শব্দ, প্রকৃতি প্রত্যয়, এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, শুদ্ধিকরণ। এই অধ্যায় গুলো থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয়। তবে এর মধ্যে ও অনেক ভাগ আছে কিছু বিষয় আছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আপনার উচিৎ সে বিষয়গুলো জানা। এক কথায় আপনার কী প্রয়োজন বেশি তা জানা উচিৎ এবং কিভাবে সহজ কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলাদা করে শেষ করবেন সেটা আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিজে পরিকল্পনা করতে না পারলে নিচের আইডিয়া ফলো করুন।
আপনি যদি সহজে বের করতে পারেন তাহলে অনেক ভাল তবে আপনি যদি মনে করেন আপনি বুঝতে পারছেন না তাহলে জব’স পাসওয়ার্ড (All in one) বইটি দেখতে পারেন। প্রতিটা অধ্যায়ের কী কী প্রয়োজন বেশি সেটা এখানে পাবেন। রিভিশন টিপস আকারে আপনাকে বলে দিবে এই বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং যে প্রশ্নগুলো বার বার রিপিট হচ্ছে তা পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে আলাদা দেওয়া আছে। সবচেয়ে ভাল হয় ২০২১-২০২২ সালে কত কমন এসেছে কোন অধ্যায় থেকে তা জানা, আপনি এটাও পাবেন এই বইয়ে সাথে । ইংরেজির বা গণিতের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম বেশি গুরুত্বপূর্ণ ২০২১-২০২২ সালের প্রশ্নের বিশ্লেষণ আকারে এই বইয়ের অধ্যায়ের শেষে দেওয়া আছে। যা আপনার প্রস্তুতিতে অনেক সহায়ক করবে। আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন বিষয়টা চাকরির জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনি কোন বিষয় বেশি পড়বেন। বইটিতে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, গণিত, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার সব বিষয় আছে এবং যা প্রয়োজন শুধু তাই আছে, এই জন্য শুরুতে এই বইটি শেষ করতে পারলে আপনি বেসিক সব ধারণা পাবেন। মানে প্রতিটা পরীক্ষার জন্য ৭০-৮০% এই বই থেকে কমন পাবেন কারণ বেসিক বিষয় গুলোই আছে এই বইয়ে । আপনি অন্য বই ও পড়তে পারেন, তবে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে এই ভাবেই আপনি কী বেশি পড়বেন এবং কী কম পড়বেন।
যেমন একটা উদাহরণ দেয় আপনার জন্য বুঝতে সুবিধা হবে। ৯৯% চাকরির পরীক্ষার্থীর কাছে সবচেয়ে কঠিন প্রকৃতি-প্রত্যয় অধ্যায়। আপনার কাছেও অনেক কঠিন আপনি কী করেন?? ছেড়েদেন এই ১ মার্ক নিবোনা বা ২মার্ক নিবো না। আপনি যদি জব’স পাসওয়ার্ড (All in one) বইটিতে প্রকৃতি-প্রত্যয় অধ্যায়ের শেষে পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১/২ পৃষ্ঠা পড়েন, দেখবেন প্রতিটা পরীক্ষায় এখান থেকেই ৯০-৯৯% কমন পাচ্ছেন। আবার আপনার সমস্যা গণিতে হতে পারে আপনি ১০০০-১২০০ পৃষ্ঠার গণিত না শিখে আপনি জব’স পাসওয়ার্ড (All in one) বইয়ের গণিত অংশ থেকে প্রতিটা অধ্যায়ের ৯-১০টা নিয়মের গণিত শিখতে পারলে আপনি প্রতিটা পরীক্ষায় দেখবেন ৮০% এই নিয়মগুলোই রিপিট হচ্ছে। তাই পড়াশুনার আগে আপনাকে কী পড়তে হবে তা নির্বাচন করতে হবে। এই একটা বই পূর্ণাঙ্গ শেষ করেন তার পরে নিজের পরিবর্তন দেখতে পারবেন। আপনি যেই বই পড়েন সেটা সমস্যা না, সমস্যা বেশি পড়তে গিয়ে পড়া শেষ না করা। একটা বই পড়েন সেটা সম্পূর্ণ ভালভাবে পড়ে শেষ করেন দেখেন আপনার প্রস্তুতি অনেক সহজ হয়ে যাবে। যখন দেখবেন আপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়া শেষ তখন আসতে আসতে এইগুলোর পাশাপাশি আপনার জানা নাই এমন বিষয়গুলো শেখার চেষ্টা করবেন, তাহলে দেখবেন আপনার ৭০-৮০% কভার করার পরে প্রতিনিয়ত % বাড়তেই আছে।